স্টাফ রিপোর্টার: প্রাচীনকাল থেকে মুক্তার প্রতি মানুষের কতই না আকর্ষণ! শখের বশে তাই ইউটিউব দেখে চাষ শুরু করেন রাজশাহীর শিক্ষার্থী রুহুল আমিন। চেয়েছিলেন আভিজাত্য ছড়ানো এই রত্মটির চাষ করে নিজে স্বাবলম্বী হবার পাশাপাশি বেকার যুবকদের কাজে লাগাতে।
ইতোমধ্যে তিনি ডিজাইনার মুক্তা তৈরি করতে ছবি রোপন (ইমেজ ইমপ্লান্টিং) পদ্ধতিতে সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু বাজার ব্যবস্থা না থাকার কারনে তার উৎপাদিত মুক্তা বিক্রয়ে সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না।
ইউটিউবে ভিডিও দেখে পুকুরে মুক্তা চাষ শুরু করেছিলেন জেলার মোহনপুর উপজেলার ছোট পালসা গ্রামের রুহুল আমিন। যিনি সিটি পলিটেকনিক এন্ড টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট রাজশাহীর ৫ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। সমন্বিত চাষ পদ্ধতিতে পুকুরে কার্পজাতীয় মাছের সাথে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তাচাষ করে বছর শেষ না হতেই পেয়েছেন সফলতা।
রুহুল ইউটিউব থেকে ঝিনাইদহ মিঠা পানির মুক্তা বিশেষজ্ঞ ড. নজরুল ইসলামের কাছে তিন দিনের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তার পুকুরে উচ্চ মানের ডিজাইনার মুক্তা তৈরি করতে ২ হাজার ঝিনুক, দড়ি, বোতল ও ক্রেটসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত করেন। পুকুর প্রস্তুতির পর ড. নজরুল ইসলাম পুকুরে আসেন এবং গত বছরের জুলাই মাসে ঝিনুকের ম্যান্টেল টিস্যুর ভিতরে কীভাবে ছবি রোপন করতে হয় সে সম্পর্কে তাকে নির্দেশনা দেন। এ পদ্ধতির জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মোম এবং ক্যালসিয়ামের মতো জটিল উপাদানগুলি এমনভাবে ঢোকানো প্রয়োজন যা কৃত্রিমভাবে মুক্তার বিকাশের সময় ন্যাক্রে নিঃসরণকে প্রভাবিত করে যাতে এটি একটি নির্দিষ্ট আকার নেয়। এভাবে ১০ মাস রাখার পর ঝিনুকের মধ্যে পরিপূর্ণতা পায় মুক্তা।
রুহুল আমিন বলেন, ইতোমধ্যে ঝিনুকে মুক্তাচাষে খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। আর ২ হাজার ঝিনুকের প্রতিটিতে দুটি করে ৪,০০০টি ছবি রোপণ করা হয়েছে। যার উচ্চ-মানের ডিজাইনার মুক্তা প্রতি পিস ৭০০ টাকায় এবং নিম্নমানের ৪০০ টাকায় বিক্রয়ের আশা করছেন।
তিনি আরও বলেন, পড়াশুনার পাশাপাশি প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ১০ মাস সময় দিয়েছি তাতেই এ সাফল্য পেয়েছি। কিন্তু বাজার ব্যবস্থা না থাকায় সঠিক মূল্য পাচ্ছি না। সরকারিভাবে যদি বাজার ব্যবস্থার কোন উদ্যোগ নেওয়া হতো তাহলে অনেক যুবক মাছ চাষের পাশাপাশি মুক্তাচাষে আগ্রহী হতো।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের শিক্ষিত যুবকরা এবং স্থানীয় মৎস্য চাষিরা পুকুর বা জলাশয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি মুক্তা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এতে বেকারত্বও কিছুটা লাঘব বলে আশা করছি।
আশ্রয় ক্ষুদ্রঋণ পরিচালক মো: কামারুজ্জামান বলেন, আশ্রয় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে তার টেকসই এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্টের অধীনে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছি এবং ভবিষ্যতেও তার পাশে আমরা থাকবো।
রাজশাহী বিভাগের মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: আব্দুর রউফ বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এ অঞ্চলের যুবকরা আগ্রহ দেখালে সহযোগিতা করবো।
ডিজাইনার মুক্তা তৈরি করতে ছবি রোপন (ইমেজ ইমপ্লান্টিং) পদ্ধতিতে ৮-১০ মাসের মধ্যে সাফল্য পাওয়া সম্ভব। ডিজাইন মুক্তার চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ভারতে।
Leave a Reply