1. admin@renesus.news : admin :
  2. Biddut@renesus.news : Biddut :
  3. renesus.news@gmail.com : renesus :
  4. info@renesus.news : shamaun :
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ০৯:৪০ অপরাহ্ন

মেয়ের শখ মেটাতে স্ট্রবেরি চাষ, বিক্রি ১৮ লাখ টাকা

কৃষি ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫
  • ১০৯ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম জয়পুর। এই গ্রামের নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল ইসলাম। ছোট মেয়ে লামিয়ার খুব পছন্দ স্ট্রবেরি। বাজারে সহজলভ্য নয়, তাই নিজেই শুরু করলেন স্ট্রবেরি চাষ। বাবা জানতেনই না যে, শখের বাগান তার ভাগ্য বদলের হাতিয়ার হবে। মেয়ের শখ মেটানোর জন্য শুরু করা সেই চাষ থেকে বাবার লাখ লাখ টাকা আয়। স্ট্রবেরি চাষের কঠিন ধাপ পার করে আজ তিনি সফল কৃষি উদ্যোক্তা।

জানা যায়, মঞ্জুরুলের স্ট্রবেরি খামারে সব সময়ই ভিড় থাকে বিভিন্ন বয়সী মানুষের। কেউ আসেন আবাদ শিখতে আবার কেউ স্ট্রবেরির সৌন্দর্য ও স্বাদ নিতে। সারি সারি বেডের সবুজ গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে শোভা পাচ্ছে লাল টসটসে রসালো স্ট্রব্রেরি। বাগান থেকে এর স্বাদ নিয়ে বেজায় খুশি শিশুরা। অন্যদিকে এলাকার তরুণ ব্যবসায়ীরা এই বাগানের স্ট্রবেরি কিনে বিক্রি করছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।

মঞ্জুরুল ইসলাম মেয়ের শখ পূরণ করতে তিন বছর আগে বাড়ির ছাদের ১০টি টবে স্ট্রবেরি চারা লাগান। ফলন ভালো হওয়ায় রাজশাহী টিস্যুকালচার থেকে বীজ সংগ্রহ করে পরের বছর দেড় বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন। দেড় বিঘা জমিতে ৭ হাজার স্ট্রবেরি চারা রোপণ করেন। একেকটি গাছে ৮০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম পর্যন্ত স্ট্রবেরি হয়। এরই মধ্যে কয়েকশ চারা বিক্রি করেছেন। স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন ১৮ লাখ টাকার ওপর। আগামীতে অন্তত আরও কয়েক লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করবেন। মঞ্জুরুল ইসলামের এ সফলতা দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ফল পাওয়া পর্যন্ত সব মিলিয়ে আমার সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কয়েক লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছি। সব খরচ বাদ দিয়ে ৬ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। প্রতিদিন দেড় থেকে ২ মণ ফল সংগ্রহ হয়। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি পাইকারি বিক্রি হয় ৪০০-৫০০ টাকা। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। তাই অনেকে আগ্রহ নিয়ে কিনছেন। জানুয়ারি-মার্চ গাছ থেকে নিয়মিতভাবে ফল পাওয়া যায়। এটি শীতকালীন চাষ। রোদের তাপমাত্রা বাড়লেই স্ট্রবেরি গাছ মারা যায়। ফল দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আগামীতে আরও জমিতে চাষ করবো। কম সময়ে বেশি মুনাফা হওয়ায় চাষিদের মাঝে আগ্রহ দেখা গেছে।’

তিনি বলেন, ‘৩ বছর আগে দেড় বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে লাভ আসে ৬ লাখ টাকা। প্রথম বছরের অভিজ্ঞতায় গত ২ বছর বেড়েছে চাষের পরিধি। পাশাপাশি অর্জন করেছি অনন্য অভিজ্ঞতা। তবে স্ট্রবেরির মানসম্মত টিস্যু চারার সংকট আছে। তাই সরকারি সহযোগিতায় ল্যাব স্থাপন করা গেলে সারাদেশের উদ্যোক্তাদের হাতে উন্নত চারা তুলে দিতে পারবো।’

মেয়ে লামিয়া ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমরা কুষ্টিয়ায় থাকতাম। তখন আব্বু আমার জন্য স্ট্রবেরি ফল কিনে নিয়ে আসেন। আমার ফল অনেক ভালো লাগে। তখন আব্বুকে আমি স্ট্রবেরি চাষের জন্য বলি। তাই আব্বু পরীক্ষামূলক বাড়ির ছাদে চাষ শুরু করেন। ছাদে এ ফল চাষ করে সফলতা পেলে প্রথমে দেড় বিঘা, বর্তমানে চার বিঘা জমিতে চাষ করছেন। আগামী বছর আরও বেশি করে স্ট্রবেরি চাষ করবেন।’

ক্রেতা আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বিদেশি বেশি দামের এ ফল মঞ্জুরুলের মাধ্যমে হাতের নাগালে সহনীয় দামেই পাওয়া যাচ্ছে। আগে এ ফল চোখে দেখা খুবই কঠিন ছিল। আমাদের পাশের গ্রাম জয়পুরে এ ফল সামর্থের মধ্যেই পাওয়া যায়।’

কৃষক ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের মেহেরপুরের মাটিতে এত সুন্দর ফল হবে, তা কখনো কল্পনা করিনি। মঞ্জুরুল ইসলাম ভাই ৪ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে যে টাকা লাভবান হয়েছেন, তা অন্য আবাদে সম্ভব নয়। ভালোভাবে বাজারজাত করতে পারলে আরও লাভ হওয়া সম্ভব। আমি চারা সংগ্রহ করে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী বছর চাষ করবো।’

কৃষক জায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘মঞ্জুরুল ইসলামের কাছে স্ট্রবেরি চাষ হাতেকলমে শিখতে এসেছি। আগামীতে নিজ জমিতে তার পরামর্শে চাষ করতে চাই।’

ফল ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমি মৌসুমী ফলের ব্যবসা করি। জানুয়ারি-মার্চ মাসে স্ট্রবেরির ব্যবসা করি। কারণ এই ফলের চাহিদা অনেক। পাশাপাশি এই ফল বিক্রি করে লাভ বেশি হয়।’

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘এখানকার কৃষকেরা নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে অনেক আগ্রহী। মঞ্জুরুল ইসলাম জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উচ্চমূল্যের ফসল। তিনি বাজারমূল্য ভালো পাচ্ছেন। আশা করি জেলায় আরও চাষ হবে। আমরা আগ্রহী অনেককেই পরামর্শ দিচ্ছি।’

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
কারিগরি সহযোগিতায়: সিসা হোস্ট