স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর হাতে ‘বেধড়ক পিটুনী’র শিকার গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী কলেজ অধ্যক্ষ সেলিম রেজা দুইদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে সব ঘটনা অস্বীকার করে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করলেও মারপিটের ঘটনাটি সত্য বলে দাবি করেছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
তিনি দাবি করেন, মারপিটের ঘটনার পর ওই কলেজ অধ্যক্ষ ফোন করে সব ঘটনা খুলে বলেছিলেন। এখন চাকরি হারানোর ভয়ে তিনি (অধ্যক্ষ) ডিগবাজ দিয়ে এমপির পক্ষেই অবস্থান নিয়ে সত্য ঘটনা আড়াল করেছেন।
শনিবার সকালে নগরীর লক্ষীপুর মোড়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের অফিসে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসব অফিযোগ করেন আ’লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ। এ সময় ওই অধ্যক্ষকে পেটানোর ঘটনার বিষয়ে অধ্যক্ষ এক আ’লীগ নেতার সঙ্গে কথোপকথোনের একটি অডিও ফাঁস করেন আসাদ। অডিওতে শোনা যায়, তিনি (অধ্যক্ষ) মারপিটের শিকারের ঘটনা জানিয়ে প্রতিকারের অনুরোধ জানান। অধ্যক্ষ সেলিম রেজা ১১ জুলাই তাকে ফোন করে পুরো ঘটনা বলে তার সহযোগিতা চেয়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান আসাদ এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিভিন্ন অপকর্মগুলো তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অর্থ আত্নসাত, খাসজমি ইজারায় দুর্নীতি, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি এবং জামায়াত-বিএনপির ব্যক্তিদের নিয়োগসহ ২০ ধরনের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে দুদক।
২০১১ সালে তানোর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল করিম সরকারি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, বিএনপি নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭০ ভাগ জামায়াত বিএনপির ক্যাডারদের চাকরী প্রদান, মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক, নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয় নেতাকর্মীদের জুতাপেটা, স্কুলের ক্লাস বন্ধ রেখে সংবর্ধনা নেওয়া, মাদকব্যবসায়ীকে বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে বসা, নৌকায় ভোট না দেয়াসহ বিভিন্ন কাজে জড়ির থাকার অপকর্ম তুলে ধরেন।
এর আগে গত ১৩ জুলাই কয়েকটি গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকশিত হয়। এরপর তোলপাড় শুর হয়ে। শিক্ষক সমাজও ফুসে উঠেন। তবে ঘটনা আড়াল করতে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা ডিগবাজি দেন। চলে যান আত্মগোপনে। হঠাৎ করেই গত ১৪ জুলাই এমপি ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে হাজির হয়ে তার পাশে বসে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুরো ঘটনাটিকে অস্বীকার করেন। তারা ঘটনাটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। সেখানে সাংবাদিকদেরও দোষারোপ করা হয়।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছেও একই বক্তব্য দেন সেলিম রেজা। ফলে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পেটানোর ঘটনাটি নিয়ে বিভ্রান্তিও তৈরি হয় জনমনে। অবশেষে সেলিম রেজার জবানিতে ১০ মিনিটের ফাঁস হওয়া কথোপকথনে বেরিয়ে এসেছে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার পুরো ঘটনা। এতে বেরিয়ে এলো প্রকৃত সত্য।
তদন্ত কমিটির প্রধান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লাহ মাহফুজ আল হোসেন জানান, ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক নেতা ও মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গেও কথা বলেছেন। শিগগিরই অধ্যক্ষ হেনস্তার বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর প্রতিবেদন জমা দেবেন।
Leave a Reply