স্টাফ রিপোর্টার,রাজশাহী: এবার আবহাওয়া অনুকূলে, দামও তুলনামুলক বেশি। ফলে রবি মৌসুমে অধিক লাভের আশায় আলু চাষে ঝুঁকেছেন রাজশাহীর চাষিরা। আগাছা পরিষ্কার এবং সার প্রয়োগের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আলু কম চাষ হলেও বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্ট অফিস।
জেলার নয়টি উপজেলাতেই ডায়মন্ড, গ্রানুলা, স্টারিস ও কার্ডিনাল জাতের আলু চাষ করেছেন চাষিরা। পুরোদমে চলছে আলুর পরিচর্যা। চলছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধে কীটনাশক স্প্রেও। পুরোপুরি ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও বাণিজ্যিকভাবে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
চাষিরা বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে তারা আলুর নায্য দাম পান না। তবে গত দুই বছর থেকে দাম ভালো পাওয়ায় আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তারা। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও এ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। অনেক চাষি আগাম (ষ্যাঁটা) জাতের আলু চাষ করেছেন। এসব আগাম আলুর দাম বেশি পাওয়ায় অনেক চাষি আগ্রহ নিয়ে আলু চাষ করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে। ৩৬ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে আগের তুলনায় কমেছে আলুর চাষ। গত বছর আলুর ফলন হয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন।
জেলার তানোর যোগীশহ এলাকার আলু চাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। বর্তমানে আলুর দাম ভালো দাম রয়েছে। বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে সে দামে তো আর জমিতে বিক্রি হবে না। আগাম আলু ১২’শ টাকা মণ বিক্রি করতে পারলেও লাভ হবে। লোকসান হবে না। কিন্তু আলুর দাম কিছুটা কমে গেছে। একটা মাঝারি অবস্থায় থাকলে ভালো হয়। অন্তত ১৪’শ টাকা মণ লাল আলু বিক্রি করতে পারলে লাভের মুখ দেখতে পাওয়া যাবে।
একই উপজেলার আলু চাষি ও ব্যবসায়ী আব্দুর রাকিব বলেন, গত বছর ৫০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলাম। কিন্তু এবছর আলুর বীজ সংকট এবং দাম বেশি হওয়ায় ৩০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। এবার দাম ভালো আশা করছি। আমার সব আলু কার্ডিনাল। স্টোরেজ করে রাখি কিছুটা আবার বিক্রি করে দিই ভালো দাম পেলে।
জেলার দুর্গাপুর উপজেলার মিরপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম সরদার জানান, প্রতি বছর আড়াই বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। কিন্তু এ বছর পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে ১০ কাঠা জমিতে আলুর চাষ করেছি। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। এছাড়া বাগমারা উপজেলার আলু চাষি আব্দুর রশিদ মিঞা আলুর ভালো ফলনের সম্ভাবনার কথা জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, আলুর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষক। আমরা সরেজমিনে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে কথা বলেছি। বীজ কিংবা সারের কোন সংকট নেই। আর নির্ধারিত সময়ে আলু চাষের জন্য উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষকরা যাতে আলুর ভালো ফলন পান সেই জন্য সার, সেচ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply