স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি রাজশাহীতে বাড়ছে এলএসডি বা ল্যাম্পিস্কিন ডিজিজ আক্রান্ত গরুর সংখ্যা। এ নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গরু মালিকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও মহানগরেও সম্প্রতি বেড়েছে এই রোগের প্রাদুর্ভাব। দুর্গাপুর উপজেলায় এরই মধ্যে ২০০ গরু এলএসডি আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
তানোরে সারাবছরই প্রতিদিন দু-একটা গরুর চিকিৎসা করানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বিল্লাল হোসেন। এছাড়া বাগমারা উপজেলার দামনাশ, গোবিন্দপাড়া, পারদামনাশ, ভবানিগঞ্জ; পবা উপজেলার কেশরহাট, মোহনপুরেও আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে- নিয়মিত টিকা কার্যক্রম বছরজুড়েই চালু রয়েছে। ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ার কারণে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব হবে না। তবে, প্রতিরোধের কিছু উপায় রয়েছে। দুর্গাপুর উপজেলার বেশ কিছু খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিন বিশেক আগে থেকে শুরু হয়েছে এই রোগের প্রাদুর্ভাব। বর্ষার শুরুতে ও বন্যার পরবর্তী সময়ে বেশি দেখা যায়। ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ।
প্রাণী চিকিৎসকরা বলছেন, দেশের সব জায়গায় অতিরিক্ত আকারে দেখা দিয়েছে গরুর এলএসডি বা ল্যাম্পিস্কিন ডিজিজ। এলএসডি গরুর জন্য একটা ভয়ংকর ভাইরাসবাহিত চর্মরোগ। এই রোগের গড় মৃত্যুহার আফ্রিকাতে ৪০ শতাংশ। মূলত আফ্রিকায় একাধিকবার মহামারি আকারে দেখা গেলেও বাংলাদেশের গরুতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কখনো মহামারি আকারে দেখা যায়নি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এটি মূলত এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদিপশুতে এই রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে যে সময়ে মশা-মাছি অধিক বংশবিস্তার করে সেসময় এই রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসার সম্পর্কে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের রাজশাহী অঞ্চলের খামার শাখার পরিচালক জিনাত আরা বলেন, এলএসডি আক্রান্ত গরুর প্রথমে জ্বর হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়। জ্বরের সঙ্গে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। সামনের দু’পায়ের মাঝখানে পানি জমে যায়। শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্ট হয়। ধারাবাহিকভাবে এই ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষত মুখের মধ্যে, পায়ে এবং অন্যান্য জায়গা ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাকস্থলী অথবা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরু পানি পানে অনীহা প্রকাশ করে এবং খাদ্যগ্রহণ কমে যায়।
তিনি বলেন, লাম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত গরু থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে রোগটি অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যমগুলো হচ্ছে মশা, নালা, গভীর দুধ ও ইনজেকশনের সিরিঞ্জ। তবে, সবচেয়ে ভালো বিষয়- এই রোগে কেবল গরু-মহিষ আক্রান্ত হয়, মানুষ হয় না।
এলএসডিতে আক্রান্ত হলে করণীয় নিয়ে জিন্নাত আরা বলেন, আক্রান্ত গরুকে নিয়মিত এলএসডি ভ্যাকসিন দেয়া। দেশে এর আগে রোগটির প্রাদুর্ভাব কম দেখা গেছে তাই এই রোগের ভ্যাকসিন সহজলভ্য নয়। খামারের ভেতরের এবং আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, যেন মশা-মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আক্রান্ত খামারে যাতায়াত বন্ধ করা এবং আক্রান্ত খামার থেকে আনা কোনো সামগ্রী ব্যবহার না করা। আক্রান্ত গরুকে শেড থেকে আলাদা স্থানে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখা যাতে মশা মাছি কামড়াতে না পারে।
জেলায় ভয়ঙ্কর এলএসডি রোগের বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, ল্যাম্পিস্কিন বা এলএসডি রোগের খবর পেয়েছি। জেলার বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত বাড়ছে। আমরা দুর্গাপুরে টিকা পাঠিয়েছি। গরুর গায়ে মশা-মাছি যেন বসতে না পারে সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ দেন।
Leave a Reply