1. admin@renesus.news : admin :
  2. Biddut@renesus.news : Biddut :
  3. renesus.news@gmail.com : renesus :
  4. info@renesus.news : shamaun :
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ০৫:০২ অপরাহ্ন

রাজশাহীর এক গ্রামেই ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু

রিপোটারের নাম :
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, চারঘাট: রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা ডেঙ্গুর ‘হটস্পটে’ পরিণত হয়েছে। উপজেলার মুংলী গ্রামেই স্কুলছাত্রসহ পাঁচজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন মানুষ। দরিদ্র পরিবারের লোকজন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই শুধু ‘নাপা’ বড়ি খেয়েই বাড়িতে পড়ে থাকছেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯৫, যা এ মৌসুমে সর্বোচ্চ। আজও চারঘাট ও বাঘার রোগীই সবচেয়ে বেশি।

রামেকে রাজশাহীর নয়টি উপজেলার রোগীসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মুমূর্ষু রোগীদের অনেকে চিকিৎসা নিতে আসেন। ৮ জুলাই হাসপাতালে মৌসুমের প্রথম ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৫ রোগীর মধ্যে এক গ্রামের পাঁচজনসহ শুধু চারঘাটের আছেন ছয়জন। ১৮ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর দিক থেকে জেলার মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে আছে চারঘাট ও বাঘা।

উপজেলার ভ্যানচালক নজরুল ইসলামের (৫০) জানান, চারঘাটের সব বাড়িতে জ্বর। তিনি নিজেই ১৫ দিন জ্বরে ভুগেছেন। তার ছেলে স্কুলছাত্র রবিউল ইসলাম ও স্ত্রী রওশান আরা (৩৩) জ্বরে আক্রান্ত। ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা করানির সামর্থ্য নাই। শুধু নাপা বড়ির ওপর ভর কইরি আছি। যত দিন বাঁচি।’

আরেক ভ্যানচালক রুহুল আমিন (৪০) একই কথা বললেন। তিনি নিজে, স্ত্রী রীপা বেগম (৩০) ও ছেলে রায়হান (১৭) ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন। তিনি বলেন, ছেলে ও স্ত্রীর পরীক্ষা করিয়েছেন। তাদের দুজনেরই ডেঙ্গু ধরা পড়ে। প্রত্যেকের তিনটা করে পরীক্ষা করতে হয়েছে। তাতে একেকজনের ১ হাজার ৭০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। এ জন্য নিজের আর পরীক্ষা করাতে পারেননি। জ্বর নিয়েই ভ্যান চালাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মুংলী দক্ষিণ পাড়ার আজিত উল্লাহর স্ত্রী আশরাফুন (৭৫) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কিছুক্ষণ আগেই মুংলী মাদ্রাসা মাঠে তাঁর জানাজা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রামে পাঁচজন ডেঙ্গু রোগী মারা গেলেন। প্রথমে মারা যান মোরশেদ আলীর স্ত্রী মাবিয়া বেগম (৪০)। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর আতিক হাসান ওরফে তৌহিদ (১৩) নামের এক স্কুলছাত্র, আতিকের মৃত্যুর দুই দিন পর গ্রামের তোতাহারের ছেলে আলাল উদ্দিন (৩০) মারা যান। সপ্তাহখানেক আগে মারা যান গৃহবধূ মানুয়ারা খাতুন (৪০)।

স্কুলছাত্র আতিকের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বললেন, গ্রামের আলতাবের মোড়ের তিনজন লোক প্রথমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তার পর থেকে গ্রামে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর ছেলের মাথাব্যথা ও জ্বরের কথা বলার পর আর দেরি করেননি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ছয় দিন পর ছেলে মারা যায়।

চারঘাটের গোপালপুর গ্রামে সাজিদ হোসেন নামের ১৩ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্র গত বুধবার মারা গেছে। মুংলী লাগোয়া অনুপমপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাজু মঙ্গলবার থেকে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। ভ্যানচালক নজরুল ইসলামের ছেলে একই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, বাইরে থেকে আসা মানুষের কারণে চারঘাটে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ হয়তো ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছেন। এখন ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নেওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮০। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২৬ জন রোগী। বেশি মৃত্যুর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘হাইপো ভলিমিয়া সিনড্রোম’। জ্বর সারলেই রোগীরা ভাবছেন, তাঁরা সুস্থ হয়ে গেছেন। কিন্তু জ্বর ছাড়ার দুই-তিন দিন পর ওই সিনড্রোমের আশঙ্কা থাকে।

আশিকুর রহমান বলেন, হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট আছে। স্যালাইনও আছে। তবে প্রতিদিন প্লাটিলেট মাপতে হয়। এ জন্য ‘সেল কাউন্টার মেশিন’ লাগে, সেটি হাসপাতালে নেই। এই পরীক্ষা বাইরে করতে হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিকেলে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া মৌসুমের প্রথম রোগী ছিলেন বাঘার ঢাকাচন্দ্রগাঁতি গ্রামের পাপ্পু (২৩)। তিনি ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর মা সেলিনা বেগম ছেলের শোকে অসুস্থ পড়েন। ৩ অক্টোবর তিনিও মারা যান। শুক্রবার বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ১১ জন ডেঙ্গু রোগীকে ভর্তি পাওয়া যায়।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, চলতি ডেঙ্গু মৌসুমে রামেক হাসপাতালে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলো।

রামেক হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে এখন পর্যন্ত রামেকে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৭৫২ জন রোগী। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে (রাজশাহীর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৩২ জন। বাকিরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে আক্রান্ত হন। মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৫৩৮জন রোগী। বর্তমানে আরও ১৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মো. ফারুক বলেন, মানুষকে সচেতন হতে হবে। জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। বৃষ্টি না হলে কড়া রোদ উঠলেই এডিস মশার প্রাদুর্ভাব কমে যাবে। চারঘাট উপজেলার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওখানে নির্মাণকাজ চলছে। ওদের কেরোসিন ছিটাতে বলে এসেছেন।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
কারিগরি সহযোগিতায়: সিসা হোস্ট