স্টাফ রিপোর্টার, রাবি : স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাবি সংলগ্ন বিনোদপুর বাজার। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অন্তত ২৫-৩০টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করেন।
এ ঘটনায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রাত ১০টার পরও সংঘর্ষ চলে। চার ঘণ্টা পার হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে বিনোদপুর বাজারে অবস্থান করছেন বিজিবি সদস্যরা।
এদিকে, সংঘর্ষের পর রবি (১২ মার্চ) ও সোমবার (১৩ মার্চ) এই দুদিন সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।সংঘর্ষ শুরুর প্রায় ৪ ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন।
এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের প্রতি অনুরোধ, হলে ফিরে যাও। প্রশাসন তোমাদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। তোমরা রুমে যাও। এ ঘটনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়া থেকে বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সিটে বসাকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে ঝামেলা হয় একজনের। পরে বাসটি বিনোদপুর বাজারে আসলে বাস আটকে চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে এক দোকানি এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। পরে ওই ব্যক্তির সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় দোকানিরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। বাঁশ-লাঠি নিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন। শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আবার বিনোদপুর গেটের দিকে লাঠিসোটা নিয়ে দোকানিদের ধাওয়া করেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থল আসেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও তার কয়েকজন অনুসারী। পরে স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল রেখে চলে যান তারা। এ সময় মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন স্থানীয়রা। পরে দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন তারা। এছাড়াও বিনোদপুর গেট পুলিশ বক্স ও কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়। মহাসড়কের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বিনোদপুর বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, স্থানীয়দের এমন অত্যাচার আমরা মেনে নিতে পারছি না। কিছু হলেই তারা শিক্ষার্থীদের মারছে, প্রতিবাদ করারও সুযোগ দিচ্ছে না। পুলিশও আমাদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৪০ জন ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। তবে ঘটনার পরপরই হাসপাতালে ডাক্তারসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম জানান, আহতদের অনেককে বাসে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আগামী রবিবার এবং সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
Leave a Reply