স্টাফ রিপোর্টার, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আহত তিন শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে তাদের ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হামলা ও পুলিশের গুলি চালানোর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্ত্বরে নীরব প্রতিবাদ করেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান। এর আগে, সোমবার রাতে শিক্ষার্থীদের রেললাইনের অবরোধের ঘটনায় চুরির মামলা দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, সংঘর্ষের চতুর্থ দিনে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন কোনো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। সংঘর্ষস্থল বিনোদপুরেও দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। এই এলাকার আবাসিক মেসগুলোতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরাও সকাল থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেছেন। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে স্বাভাবিক হয়েছে গাড়ি চলাচল। তবে মঙ্গলবারও ক্যাম্পাসের আশপাশে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১১ মার্চ সংঘর্ষের পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৯২ শিক্ষার্থীর অধিকাংশই রবি ও সোমবার ছাড়পত্র পায়। এদের মধ্যে রাকিবুল হাসান নামে এক শিক্ষার্থীকে গুরুতর অবস্থায় আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। পরে তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত হওয়ায় সাধারণ ওয়ার্ডে আনা হয়। সংঘর্ষের রাতেই ছয় শিক্ষার্থীকে চক্ষু বিভাগে ভর্তি করে চোখে অস্ত্রপচার করা হয়। এদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীকে মঙ্গলবার সকালে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা হলেন ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মেসবাহুল ইসলাম সায়েম, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আলিমুল সাকিব।

রামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, তিন ছাত্রের চোখের ‘ভিট্রিয়ল রেটিনাল ইনজুরি’ হয়েছে। রাজশাহীতে এর চিকিৎসা সম্ভব না হওয়ায় তাদের ঢাকায় জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম. তারেক নূর জানান, শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার ব্যয়ভারও বহন করা হবে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের উপর স্থানীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশের গুলির ঘটনায় নগ্ন পায়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন। মঙ্গলবার বেলা ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনার প্লাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে তিনি এই প্রতিবাদ করেন। ফরিদ উদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থীরা এখনও হাসপাতাল ছাড়তে পারেনি, অনেকের সেলাই কাটেনি। তারা ক্লাসে ফিরতে পারছে না। তাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে আজকে আমি ক্লাস বর্জন করে দাঁড়িয়েছি।

এদিকে, স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এলাকায় রেললাইন অবরোধের ঘটনায় ২০০ থেকে ৩০০ জন অজ্ঞাতনামা ‘বিক্ষুব্ধ জনতা’র বিরুদ্ধে চুরির মামলা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে রাজশাহীর ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) ভবেশ চন্দ্র রাজবংশী বাদী হয়ে সোমবার রাতে জিআরপি থানায় মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী রেলওয়ে থানা পুলিশের ওসি গোপাল কর্মকার।