রেনেসাঁস নিউজ ডেস্ক: তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভুমিকম্পে প্রাণহানি পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও মঙ্গলবার জানায়, সোমবারের এই ভুমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় অন্তত আড়াই কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
মঙ্গলবার পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে আট হাজার লোককে জীবিত উদ্ধার করেন। ধারণা করা হচ্ছে, এখনও হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তুপের মধ্যে চাপা পড়ে আছে। উদ্ধার তৎপরতা জোরদারে তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, বাংলাদেশ ও ব্রিটেনসহ অন্তত ১৯ দেশ। মঙ্গলবারই কয়েক দেশের চৌকষ উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে অভিযান শুরু করেন।
সোমবার ভোরে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ঐতিহাসিক গাজিয়ানতেপে সিরিয়া সীমান্তের কাছে শক্তিশালী এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। তুরস্কের দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পে সেদেশে ৩,৪১৯ জনেরও বেশি মারা গেছে।
সিরিয়ায় মারা গেছে ১৬০০ জনের বেশি। তুরস্কে ভুমিকম্পের ক্ষত কাটাতে আগামী তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। মঙ্গলবার তিনি বলেন, তার দেশের দক্ষিণপূবাঞ্চলে ভুমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ জন্য আগামী তিন মাস ওই এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি থাকবে। তিনি বলেন, বিশ্বের ৭০ দেশ এই তুরস্কের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্রলংকারী ভুমিকম্পে ধসে যাওয়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটতে পড়া শ শ পরিবারকে রক্ষায় সময় ফুরিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন সিরিয়ার সরকারবিরোধী অংশের পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান রাদ আল-সালাহ।
বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় হোয়াইট হেলমেটস নামে পরিচিত সংগঠনের উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য জরুরিভিত্তিতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে সহায়তা প্রয়োজন বলে মঙ্গলবার জানান রাদ আল-সালাহ।
তিনি বলেন ‘সময় ফুরিয়ে আসছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও শ শ পরিবার। প্রতিটা সেকেন্ড জীবন বাঁচানোর, আমরা প্রতিটি মানবিক সংস্থার প্রতি জরুরিভিত্তিতে এ বিপর্যয় মোকাবেলায় নামতে ও বস্তুগত সহায়তার দিতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। ভূমিকম্পে উভয় দেশের বিভিন্ন শহরে প্রায় সাত হাজার ভবন ধসে গেছে। লোকজন ঘুমিয় থাকার ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশ দুটির প্রধান কয়েকটি বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সাহায্যকারী বিমান নামতে পারছে না। তুরস্ক ও সিরিয়ায় তুষাড়ঝড় অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ভুমিকম্পে ঘড়বাড়ি হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছেন। অনেকে ঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। এরকমই একজন মোস্তফা কোয়েনকু (৫৫)। তিনি তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে গাড়িতে থাকছেন।
তিনি বলেন, আমরা ঘরে যেতে সাহস পাচ্ছি না। ভয়ে আছি। বছরের পর বছর গৃহ যুদ্ধে ধ্বংস হওয়া সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে আহতদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও টারটাসে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
Leave a Reply