নওগাঁ: ক্রমাগত সরিষা চাষের পরিমাণ বাড়ছে নওগাঁয়। হালকা শীতের আমেজে চাষিরা জমি চাষাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমন ধান কেটে কেউ আলু আবার কেউ সরিষা রোপণ করবেন। মাঝখানে সরিষা চাষে একেবারেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন চাষিরা। ভালো দাম পাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে তারা পুনরায় সরিষা চাষে বেশি মনোনিবেশ করছেন। গত ৫ বছরে নওগাঁ জেলায় সরিষা চাষের পরিমাণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রবি মৌসুমে জেলায় মোট ৪৩ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২৯ হাজার ২৬৫ হেক্টর, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩১ হাজার ১৭৫ হেক্টর, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৩২০ হেক্টর এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩৪ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। অর্থাৎ গত ৫ বছরে জেলায় সরিষা চাষের পরিমাণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর।
চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছর উপজেলা ভিত্তিক সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ সদর উপজেলায় ২ হাজার ৩১০ হেক্টর, রানীনগরে ৩ হাজার ৫৯০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ৩ হাজার ১২৫ হেক্টর, বদলগাছীতে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২ হাজার ৩০৮ হেক্টর, পত্নীতলায় ৬ হজার ৪৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৩ হাজার ২৩৫ হেক্টর, সাপাহারে ৪ হাজার ৫১০ হেক্টর, পোরশায় ৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর, মান্দায় ৬ হাজার ৩০০ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে ৬ হাজার ৭৫ হেক্টর। এ পরিমাণ জমি থেকে ৬৭ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদিত হবে বলে কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা।
বর্তমানে কৃষকরা উন্নত জাতের বারী-১৪, বারী-১৫, বারী-১৭, বারী-১৮, বিনা-৪, বিনা-৭, বিনা-৯ এবং টরি-৭ জাতের সরিষার আবাদ করছেন। কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনা ও সরিষা তেলের দাম বেশি হওয়ায় চলতি বছরে কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
মান্দা উপজেলার বালিচ গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন বলেন, ‘এ বছর দুই বিঘা জমিতে টরি-৭ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। বিঘাপ্রতি ৬-৭ মণ ফলন পাওয়া যায়। গতবছর ৩ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা মণ দাম পাওয়া গেছে। গত কয়েক বছর থেকেই ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। সরিষা উঠানোর পর ওই জমিতে বোরো আবাদ করা হবে। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়েই বোরো আবাদ হবে।’
উপজেলার ভারশোঁ গ্রামের সরিষা চাষি হারুন রশীদ বলেন, ‘সরিষার জমি প্রস্তুত করতে বিঘাপ্রতি প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। সরিষা ঘরে উঠানো পর্যন্ত খরচ হয় প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এ বছর ৬ বিঘায় টরি-৭ জাতের সরিষা লাগাবো। জমি প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১২-১৫ দিনের মধ্যে জমিতে রোপণ করা হবে। গতবছর ভালো দাম পাওয়া গেছে। আশা করছি এ বছরও ভালো দাম পাওয়া যাবে।’
এরপর তিনি ওই জমিতে বোরো আবাদ করবেন। দুটি চাষ ও সামান্য পরিমাণ সার দিয়ে চারা রোপণ করবেন। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরোর আবাদ করবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে সরকার সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। বাজারে সরিষার ভালো দাম পাওয়া, নতুন নতুন উন্নত জাতের উদ্ভাবনের ফলে ফলন বৃদ্ধি এবং পতিত জমিতে মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষের মাধ্যমে লাভজনক হওয়ার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সরিষা উত্তোলন করেই তারা ওই জমিতে বোরো চাষ করতে পারছেন। এতে খরচ কিছুটা কম হয়।
Leave a Reply