সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত নারী উদ্যোক্তা রোবাইয়াত ফাতিমা তনির ‘সানভিস বাই তনি’র শোরুম খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১০ জুন) তনির রিট পিটিশনের শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন। এদিন তনির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন ও রবিউল আলম বুদু। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও অন্যরা।
গত ২৭ মে ‘সানভিস বাই তনি’ শোরুম সিলগালা করা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
১০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। ১০ দিন পর রুলের পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানানো হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
এর আগে গত ১৪ মে প্রতারণার অভিযোগে সিলগালা করা হয় গুলশানের ‘সানভিস বাই তনি’ শোরুম। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে শোরুমটি বন্ধ করে দেয়।
এ বিষয়ে রোবাইয়াত ফাতিমা তনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমার শোরুম অবৈধভাবে বন্ধ করেছিল। জরিমানা করার পরও শোরুম বন্ধ করে আমার ক্ষতি করা হয়েছে। এজন্য আদালতে এসেছিলাম।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জব্বার মন্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, আইন মেনেই সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালত যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সে বিষয়ে অধিদপ্তরের আইনজীবীরা কথা বলবেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে হয়রানি করার অভিযোগ তুলে গত ২১ মে তনির পক্ষে রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান।
রিট পিটিশন থেকে জানা যায়, গত ৪ এপ্রিলের এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর পুলিশ প্লাজায় রোবাইয়াত ফাতিমা তনির মালিকানাধীন ‘সানভিস বাই তনি’র প্রধান শোরুমে গত ১২ মে অভিযান চালান অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জব্বার মন্ডল ও ইন্দ্রানী রায়। ওই দিন তার শোরুম সিলগালা করে দেয়া হয় এবং অভিযোগের শুনানির জন্য তনিকে অধিদপ্তরে হাজির হতে বলা হয়। পরবর্তীতে ১৪ মে দুই দফায় ৫০ হাজার ও ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় তনিকে।
এছাড়া আরও জানা যায়, লুবনা ইয়াসমিন নামের এক নারীর (পেশায় আইনজীবী) অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানী রায়। লুবনা ইয়াসমিন নামের ওই ক্রেতা সানবিস থেকে একটি পোশাক কিনেছিলেন ৯ ফেব্রুয়ারি। এর ৫৩ দিন পর ৩ এপ্রিল ওই নারী ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযোগ করেন। বাকি ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় রাজু নামের অপর এক ক্রেতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে।
এ ব্যাপারে তনির আইনজীবী বলেন, নিয়মানুযায়ী যে কোনো পণ্য কেনার ৩০ দিনের মধ্যে সে পণ্যের ব্যাপারে ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে হবে। তা না হলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে। কিন্তু লুবনা নামের যে ক্রেতার অভিযোগ তা করা হয়েছে প্রায় ২ মাসের কাছাকাছি সময়ে। তাছাড়া তনির কাছে জরিমানা আদায়ের রশিদ বাদে কোনো আদেশের কপি কিংবা নোটিশ দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি ভোক্তা অধিদপ্তর। এক্ষেত্রে তনিকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর সুযোগ না দেয়ার কথাও জানান এই আইনজীবী।
তিনি বলেন, সমস্ত প্রক্রিয়াটিতেই আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। এমনকি এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে রিট করলে অধিদপ্তর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তনির অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও নজরদারি শুরু করেন। এরইমধ্যে তনির ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আইনজীবী খালেকুজ্জামান।
Leave a Reply