1. admin@renesus.news : admin :
  2. Biddut@renesus.news : Biddut :
  3. renesus.news@gmail.com : renesus :
  4. info@renesus.news : shamaun :
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ১০:৪২ অপরাহ্ন

৪৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রতিবেদনে বড় ধরনের ‘গোঁজামিল’

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ২০৫ বার পড়া হয়েছে

পার্বত্যের তিন জেলায় আমিষ উৎপাদন বৃদ্ধি, পিগ ফার্ম স্থাপন এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ম্যৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।  তবে এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ কীভাবে হবে কিংবা প্রকল্পে আয়-ব্যয়ের সংস্থান কীভাবে হবে তার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে এর কিছুই উল্লেখ নেই। অনেকটা দায়সারাভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক সূত্র।

সূত্রটি বলছে, ‘৩টি পার্বত্য জেলায় সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় আয়-ব্যয়ের বিশ্লেষণে বড় ধরনের গোঁজামিল খুঁজে পেয়েছে কমিশন। সেই সঙ্গে মানা হয়নি মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো।

জানা গেছে, পার্বত্যের তিন জেলায় (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান) সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এর মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। চার বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের পুরোটাই অর্থায়ন করবে সরকার (জিওবি)। প্রকল্পটি ২০২৪-২৫ সালের অর্থবছরের এডিপিতে অনুনমোদিত নতুন প্রকল্প উচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সম্প্রতি প্রকল্পটি যাচাই-বাছাইয়ে মূল‍্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাহাঙ্গীর আলম। সভায় প্রকল্পের সম্ভাব‍্য সমীক্ষা ও বিভিন্ন খাতের ব‍্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

সভার কার্যকরী বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প প্রস্তাবে প্রকল্পের একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা সমীক্ষা) প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে। এই ফিজিবিলিটি স্টাডি বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান করেছে। স্টাডিটির আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ অধ্যায়ের টেবিলে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে সেটি পূর্ণাঙ্গ নয়।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পের মেয়াদ শেষে অর্থাৎ ৪ বছর পর পঞ্চম বছর আরো অতিরিক্ত ৩৭৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হলে প্রকল্পের আয় হবে ৬৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। একইভাবে পরবর্তী বছরগুলোতে অর্থাৎ ৬ থেকে ১০ বছরের প্রতিবছর আরও অতিরিক্ত ৩২৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হলে প্রতিবছর ৬৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা আয় হবে। কিšু‘ এ সংক্রান্ত আয় প্রকল্পের কোন কোন খাত থেকে কিভাবে হবে তার কোনো হিসাব ফিজিবিলিটি স্টাডিতে দেওয়া হয়নি।
একই সঙ্গে এই আয়ের জন্য প্রতিবছর অতিরিক্ত ৩২৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে তার সংস্থান কিভাবে হবে তারও কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বড় ধরনের গোঁজামিল দেখছে পিইসি।

এছাড়া পিইসি সভায় প্রকল্পের তিনটি খাতের প্রস্তাব নিয়ে জোর প্রশ্নের মুখে পড়ে উদ্যোগী সংস্থা মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের প্রথম কম্পোনেন্টটি হলোÑ পার্বত্য এলাকার জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ৭২ হাজার ২৭টি পরিবারকে অনুদান হিসেবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীÑ যেমন- গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়া বিতরণ করা হবে। সাধারণত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ মডেলের আওতায় এ ধরনের কাজ করে থাকে। তবে বিনামূল্যে অনুদান হিসেবে উপকরণ সহায়তা দিয়ে টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কতটা ফলপ্রসূ, তার জন্য ক্ষুদ্রঋণ মডেলের সঙ্গে কোনো তুলনামূলক বিশ্লেষণ সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

প্রকল্পের দ্বিতীয় কম্পোনেন্ট হলোÑরাঙামাটি জেলায় অবস্থিত শূকরের (পিগ) ফার্ম আধুনিকীকরণ। এর জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত পিগ ফার্মটি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীন প্রতিষ্ঠান এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত পিগ ফার্মটি উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে করতে হবে বলে পিইসি সভায় জানানো হয়।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের তৃতীয় কম্পোনেন্টটি হলোÑ বান্দরবান জেলায় একটি ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইএলএসটি) স্থাপন করা। এ আইএলএসটি স্থাপনের বিষয়ে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে প্রস্তাব করা হলেও ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টের ডিমান্ড অ্যানালাইসিস অংশে বাংলাদেশ লাইভ স্টক ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েটদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ রয়েছে সেটি নেই। এসব ক্ষেত্রে কী পরিমাণ ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েটের চাহিদা রয়েছে, বর্তমানে প্রতি বছর কী পরিমাণ ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে ইত্যাদি বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। ফলে অসম্পূর্ণ ফিজিবিলিটি স্টাডির ভিত্তিতে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় পিইসি সভায়।

প্রস্তাবিত চার বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১১৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। কিন্তু মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্য মেয়াদি বাজেট কাঠামো থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের এক হাজার ১২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ও আগামী অর্থ বছরের ৬২৬ কোটি ২১ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় এডিপিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাজেট সিলিংয়ের মধ্যে থেকে এ প্রকল্পের অর্থায়ন কীভাবে করা হবে, সে বিষয়েও কোনো পরিকল্পনা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। তবে প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদনে সেই জেলাগুলোর প্রাণিজ আমিষের চাহিদা, ঘাটতি বা সরবরাহের তেমন কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত সচিব ড. অঞ্জন কুমার দেব রায় বলেন, প্রল্পটির ব্যয়ের খাত নিয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিশেষ করে গরু, ছাগল ও মুরগির দাম নিয়েও আপত্তি জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে পিগ ফার্ম স্থাপন কতটা জরুরি সেটা নিয়েও পিইসি সভায় আপত্তি তোলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিজস্ব কিছু ব‍্যাখ‍্যা দিয়েছে। তবে সেগুলো সন্তোষজনক মনে হয়নি। পরিকল্পনা কমিশন তাদের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। ওগুলো আমলে নিয়ে নতুন করে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। পর্যবেক্ষণের কারণে প্রকল্পটির ব‍্যয় আরও কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে প্রকল্পের সম্ভাব্যতার সঠিক যাচাই এবং বিভিন্ন খাতে ব্যয় অত্যধিক ধরে প্রস্তাব পাঠানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘ডিপিপি গ্রহণযোগ্য না হলে তৎক্ষনাত ফেরত দেওয়া উচিত। কেননা এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি লাগে। এছাড়া মেয়াদবৃদ্ধির সঙ্গে খরচও বাড়ে। এতে করে রাষ্ট্র যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি জাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং যারা প্রকল্পে সম্ভব্যতা যাচাই ও অযৌক্তিক ব্যয় বাড়িয়ে প্রস্তাব পাঠায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

অন্যদিকে উদ্যোগী সংস্থা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মনে করছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য অঞ্চলে  প্রাণিসম্পদ সেক্টরে কারিগরিভাসবে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে। সেই সঙ্গে দারিদ্র বিমোচনও ঘুচবে। এছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের ২৬টি উপজেলার ১২৮টি ইউনিয়নের ৭২ হাজার ২৭টি পরিবারকে বিনামূল্যে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়া দেওয়া হবে। যার মাধ্যমে এসব পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
কারিগরি সহযোগিতায়: সিসা হোস্ট