আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সাহসিকতা ও ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্মৃতির শেকড় সন্ধান, বিরহ-বিচ্ছেদ আর সামষ্টিক সংযমের নতুন পাঠ উন্মোচন করে চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ফরাসি লেখক অ্যানি অ্যার্নো। বৃহস্পতিবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি সাহিত্যে ১১৯তম নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেছে।
নোবেল জয়ের পর ফরাসি এই লেখক বলেছেন, লেখালেখি একটি রাজনৈতিক কাজ; যা সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের চোখ খুলে দেয়। যে কারণে তিনি ভাষাকে ‘ছুরি’ হিসাবে ব্যবহার করেন, তার মতে— এই ছুরি কল্পনার আবরণ ছিঁড়ে ফেলে। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি বলেছে, ২০২২ সালের সাহিত্যে নোবেলজয়ী অ্যানি অ্যার্নো লেখনীর মাধ্যমে মুক্তির শক্তিতে বিশ্বাস করেন। তার কাজ আপসহীন এবং সহজ-সরল আর প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা, ঝকঝকে পরিষ্কার।
৮২ বছর বয়সী ফরাসি এই লেখকের বেশিরভাগ কাজই আত্মজীবনীমূলক। তার অধিকাংশ লেখার সঙ্গে সমাজবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত সাবলীলভাবে ফুটে ওঠে। ১৯৪০ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন ফরাসি এই সাহিত্যের অধ্যাপক। ইউনিভার্সিটি অব রুয়েন নরম্যান্ডি মন্ট-সেইন্ট-অ্যাগনান ক্যাম্পাস থেকে পড়াশোনা করেন তিনি।
তাকে এ বছরের নোবেলজয়ী হিসেবে বেছে নেওয়ার ব্যাখ্যায় একাডেমি বলছে, অ্যানি অ্যার্নো একেবারে ধারাবাহিকভাবে এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে লিঙ্গ, ভাষা আর শ্রেণি বিভাজন সম্পর্কিত প্রবল বৈষম্যে ভরা জীবনের গল্প তার লেখায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল নরম্যান্ডির নিম্নবিত্ত এক পরিবারে জন্ম অ্যানি অ্যার্নোর। তার আত্মজীবনীমূলক ‘আ উইমেনস স্টোরি’, ‘আ মেনস প্লেস’ ও ‘সিম্পল প্যাশন’ বই বিশ্বজুড়ে এই লেখককে পরিচিত করে তোলে। দ্য ইয়ারস বইয়ের জন্য ২০১৯ সালে সাহিত্যের আরেক সম্মানজনক পুরস্কার ম্যান বুকার পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে এই সাহিত্যিকের প্রথম বই ‘লা আরমোরিস ভিদে’ ফরাসি ভাষায় প্রকাশিত হয়।
কুড়িটিরও বেশি বই লিখেছেন এই সাহিত্যিক; যার অনেকগুলোই কয়েক দশক ধরে ফ্রান্সে স্কুলের পাঠ্য বইয়ের তালিকায় রয়েছে। অ্যানি অ্যার্নো তার বইয়ে আধুনিক ফ্রান্সের সামাজিক জীবনের সবচেয়ে সূক্ষ্ম, অন্তর্দৃষ্টিমূলক ধারণা ফুটিয়ে তুলেছেন সাবলীলভাবে। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে সাহিত্যের অভিজাত শ্রেণির কাতারে নিজেকে নিয়ে যাওয়া আনি ফরাসি সামাজিক কাঠামো আর নিজের জটিল সব আবেগের ওপর সমালোচনামূলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন অত্যন্ত সুচারুভাবে।
পুরস্কার হিসেবে ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার পাবেন সাহিত্যের এই নোবেলজয়ী। গত বছর সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তানজানিয়ার ঔপন্যাসিক আব্দুলরাজাক গুরনাহ। তিনি ভাগ্যাহত শরণার্থীদের জীবনের দুঃখ-দুর্দশা আর তাদের জীবনে ঔপনিবেশিকতার প্রভাব নিজের লেখনীতে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।
১৯০১ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১৪ বার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারবার যৌথভাবে এই পুরস্কার পেয়েছেন দু’জন করে। সাহিত্যের এই নোবেল পেয়েছেন মাত্র ১৬ জন নারী। নোবেল কমিটির সদস্যদের যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনার জেরে ২০১৮ সালে সাহিত্যের পুরস্কার স্থগিত করেছিল সুইডিশ একাডেমি।
পরে ২০১৯ সালে দু’বারের নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালের জন্য পোলিশ লেখক ওলগা টোকারচুক এবং পরের বছরের জন্য অস্ট্রিয়ার পেটার হান্টারকে সাহিত্যের নোবেল দেয়া হয়।
Leave a Reply