স্পোর্টস ডেস্ক: বেশিরভাগ মানুষের অনুমান ছিল যা, সেটিই শেষ পর্যন্ত ধরা দিল বাস্তব হয়ে। গত মৌসুমে জাদুকরী পারফরম্যান্সের আরেকটি স্বীকৃতি পেলেন করিম বেনজেমা। ২০২২ সালের ব্যালন ডি’অর জিতে নিলেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। তাতে ফুরাল ফ্রান্সের দীর্ঘ অপেক্ষাও।
প্যারিসে সোমবার রাতে জমকালো অনুষ্ঠানে বেনজেমার হাতে তুলে দেয়া হয় ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’- এর পুরস্কার, ব্যালন ডি’অর ২০২২।দুই যুগ পর ব্যালন ডি’অর জিতলেন ফ্রান্সের কোনো ফুটবলার। বেনজেমার আগে সবশেষ ১৯৯৮ সালে জিতেছিলেন জিনেদিন জিদান। সেই কিংবদন্তি জিদান এবার পুরস্কার তুলে দেন ৩৪ বছর বয়সী বেনজেমার হাতে।
দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৭টি ব্যালন ডি’অর নিয়ে আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল ও জার্মানির পাশে বসল ফ্রান্স। আর্জেন্টিনার হয়ে সবগুলোই জেতেন মেসি, ব্যক্তিগতভাবে যা সর্বোচ্চ। গত বছর সপ্তমবার জেতা মেসি এবার ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায়ই ছিলেন না, ২০০৫ সালের পর যা প্রথম। ইচ্ছার বিরুদ্ধে গত বছরের অগাস্টে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে পাড়ি দিয়ে ২০২১-২২ মৌসুমে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি।
এই বছর তালিকায় ২০তম স্থানে আছেন পুরস্কারটি পাঁচবার জেতা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। ১৭ বছরের মধ্যে যা তার সর্বনিম্ন। ব্যালন ডি’অরের জন্য আগে পুরো বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া হলেও গত মার্চে নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়। এই বছর থেকে বিবেচনা করা হচ্ছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের পুরো একটি মৌসুমের সময়কে (অগাস্ট-জুলাই)।
গত মৌসুমে বেনজেমার যা পারফরম্যান্স ও অর্জন, তাতে ব্যালন ডি’অর জয়ের জন্য সবচেয়ে ফেভারিট ছিলেন তিনিই। ২০২১-২২ মৌসুমে রিয়ালের রেকর্ড ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে বড় অবদান ছিল বেনজেমার। ১৫ গোল করে আসরের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনি। এর মধ্যে ১০টিই করেন নকআউট পর্বে। একের পর এক ম্যাচে রিয়ালের রূপকথার প্রত্যাবর্তনের নায়ক তিনি।
বিশেষ করে শেষ ষোলো ও কোয়ার্টার-ফাইনালে ফরাসি তারকার হ্যাটট্রিকেই পিএসজি ও চেলসিকে বিদায় করে দেয় মাদ্রিদের দলটি। সেমি-ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে লড়াইয়ের ভাগ্য নির্ধারণী গোলটিও তারই করা।
গতবার রিয়ালের লা লিগা জয়েও বড় অবদান রেখে বেনজেমা করেন আসরের সর্বোচ্চ ২৭ গোল। এছাড়া ক্লাবের স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ের পথে তিনি একবার করে জালের দেখা পান সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে। মাদ্রিদের দলটির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৬ ম্যাচে করেন ৪৪ গোল।
পুরস্কারটির বিবেচিত সময়ে জাতীয় দলেও ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করেন বেনজেমা। গত বছরের অক্টোবরে ফ্রান্সের নেশন্স লিগ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। চার দলের ফাইনালসের সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে গোল করেন একটি করে।
এমন আলো ঝলমলে পারফরম্যান্সের সুবাদে গত অগাস্টে প্রথমবারের মতো উয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পান বেনজেমা। এবার পেয়ে গেলেন আরও বড় স্বীকৃতি, ব্যালন ডি’অর! ১৯৫৬ সাল থেকে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়কে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দেওয়া চালু হয়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পুরস্কারটি শুধু ইউরোপের খেলোয়াড়দেরই দেওয়া হতো। এর পর থেকে ইউরোপে খেলা বিশ্বের যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্য পুরস্কারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর ২০০৭ সাল থেকে কেবল ইউরোপের সেরা নয়, পুরস্কারটি দেওয়া শুরু হয় বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে।
ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার আর ফ্রান্স ফুটবলের ব্যালন ডি’অর একীভূত হয়েছিল ২০১০ সালে। ফিফার সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে আবার একাই ব্যালন ডি’অর দেওয়া শুরু করে ফ্রান্স ফুটবল। ব্যালন ডি’অর জয়ী নির্ধারণ করা হয় সাংবাদিকদের ভোটে।
Leave a Reply