স্টাফ রিপোর্টার: পেঁয়াজ আবাদের জন্য উপযোগী স্থান রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা। ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ। আবহাওয়া ও বাজার দরের ওপর নির্ভর করে কৃষকদের লাভ লোকসান। তবে বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার দর ভালো হওয়ায় দিন দিন রাজশাহীতে পেঁয়াজ চাষ বাড়ছে।
আমদানি নির্ভরতা কমাতে সারাবছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী করতে থাকে কৃষকদের, নিয়ে আসে প্রণোদনার আওতায়। গ্রীষ্মকালে বাজারজাত করতে পারায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন এখানকার চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, রাজশাহীতে তাহিরপুরি জাতের পেঁয়াজ চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। জেলায় হেক্টর প্রতি ১৬ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন ফলনে মোট উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৬ হাজার ২৫৯ হেক্টর। গত বছর জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৬৪ হাজার ১১২ মেট্রিক টন।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ধামিলা এলাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, আগে প্রথম প্রথম মনে করেছিলাম হবে না। কিন্তু না, আমার ধারণা ভুল। অনেক সুন্দর পেঁয়াজ হয়েছে। মাস খানেক পর তুলবো। দাম বেশি পাব বলেই তো মনে হচ্ছে। ৪০ টাকা হিসেবে বিক্রি করলে ১৬’শ টাকা মণ হয়। কম কিসে!
মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন জানান, প্রতি বছর পেঁয়াজের চাষ করি। গত বছর ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছিলোম। বিভিন্ন কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে পেঁয়াজ চাষ করায় ফলনও ভালো হয়েছিলো। কিন্তু ভরা মৌসুমে আমরা তেমন নায্য দাম পাইনি।বীজ হিসেবে পেয়াঁজ ব্রিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যায়। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম ভালো আছে। এবছর ২ বিঘা জমিতে পেয়াঁজের চাষ করবো বলে জানান তিনি।
বাগমারা উপজেলার গোবিন্দ পাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ জানান, গত শীত মৌসুমে ১০ কাঠা জিমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। পেঁয়াজে আগাছানাশক স্প্রে সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ না করায় তিন ভাগের দুই ভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পদ্ধতি না জানায় অল্প পেঁয়াজ পাই।বর্তমানে পেঁয়াজের ভালো দাম রয়েছে। তবে এ বছর কৃষি কর্র্মকতাদের পরামর্শ নিয়ে এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করবো বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোজদার হোসেন জানান, এবছর জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে সে অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পেঁয়াজ লাগানোর জন্য উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ভালো ফলন পান সেই জন্য সার, সেচ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কৃষি বিভাগ থেকে পেঁয়াজ চাষের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাসহ উৎপাদিত পেঁয়াজ দেশের সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে তবে পেঁয়াজ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।
Leave a Reply