স্টাফ রিপোর্টার : আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
শনিবার (৩ জুন) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে মিলনায়তনে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য ভোট প্রার্থনা দোয়া চান নগরবাসীর কাছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।
লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। এমডিজি, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বজনীন দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। আমার স্বপ্ন আমার জন্মশহর ও শহরের মানুষকে নিয়ে। একজন মেয়র হিসেবে নগরীর সমৃদ্ধির জন্য শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নগরীর সড়ক বর্ধিতকরণ, সৌন্দর্যবর্ধন, নাগরিক পরিসেবা নিশ্চিতকরণ, পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, অনগ্রসর জনসমষ্টির জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রদান, নতুন নতুন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত করা-ইত্যাদি কার্যক্রমে সুশাসন নিশ্চিত করে আপনাদের অধিকতর সেবা প্রদানে আমি সর্বদা সচেষ্ট থেকেছি। এবার নির্বাচনে তাই আমার ঘোষণা Ñউন্নয়ন দৃশ্যমান, এবার হবে কর্মসংস্থান।
লিটন বলেন, ক্রমবর্ধমান এই শহরের নাগরিক সুবিধা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবার আমার লক্ষ্য ও অঙ্গীকার। আমার জন্মশহরে কাজের আগ্রহ ও আনন্দ পাই তারুণ্যের প্রাণস্পন্দন দেখে। এই শহরে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্মমুখী অনেক কারিগরী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যেখান থেকে তরুণ-তরুণীরা শিক্ষাগ্রহণ করে কর্মসংস্থানের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আমি এই বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন ও আন্তরিক। তাই উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুশাসনসমৃদ্ধ একটি মহানগর গড়ে তোলা আমার স্বপ্ন। নির্বাচনী ইশতেহারে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন যেসব প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছেন, সেগুলোর অন্যতম হলো ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা। এছাড়া অর্থনৈতিক-সামাজিক-মানবিক শান্তিময় ও সমৃদ্ধ মহানগরী গড়ে তোলা। সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলভিত্তিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষা ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ মহানগরীর বিশেষত্ব অর্জন। নগরীর ভৌগোলিক আয়তন ৯৬ বর্গকিলোমিটার থেকে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারণ এবং রাজশাহী শহরের পাশে জেগে উঠা পদ্মার চরে রিভারসিটি নির্মাণ।
তিনি উল্লেখ করেন রাজশাহীতে পুর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। ব্রিটিশ অথবা আমেরিকান কারিকুলামের আদলে রাজশাহীতে একটি ইংলিশ মাধ্যম ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে দুইটি সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান। দ্রুততম সময়ে স্কুল দুটো চালুকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার জন্য একটি গার্লস ক্যাডেট কলেজ স্থাপনের লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া কারিগরি শিক্ষার জন্য স্বল্পমেয়াদি কোর্স চালু করে কম্পিউটার, ভোকেশনাল, নার্সিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং একটি পূর্ণাঙ্গ কারিগরি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হবে। ইংরেজি, আরবী, কোরিয়ান ও জাপানী ভাষা শিক্ষার জন্য ভাষা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে। রাজশাহীতে সঙ্গীত, নাট্য ও নৃত্যকলার সমন্বয়ে একটি ললিতকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নগরীতে একটি আর্কাইভ, আর্ট গ্যালারি ও সিটি মিউজিয়াম স্থাপন করা হবে।
লিটন বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে যুগপোযোগী করে গড়ে তোলা হবে। নবনির্মিত শিশু হাসপাতালটি দ্রুত চালু করে শিশু চিকিৎসা উন্নত করা হবে। সিটি হাসপাতালের আধুুনিকায়নের মাধ্যমে নগরীর পূর্বাঞ্চলের নাগরিক ও শিশুদের চিকিৎসা সেবা উন্নত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহী শহরের আন্তঃথানা, আন্তঃজেলা, আন্তঃমহানগর ও বহির্দেশীয় যোগাযোগের ক্ষেত্র সম্প্র্রসারণ করা আমার লক্ষ্য। আগামীতে রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমান চালুর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিজাতপণ্য, শিল্পজাতপণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা করা হবে। নগরীতে ২টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন আরো ৫টি নির্মাণ করা হবে। রাজশাহী বিসিক-২ এ শিল্প কলকারখানা স্থাপন ও দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে। ট্যানারি শিল্প ও লেদার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন করা হবে। রাজশাহীতে মাঝারি, কুটিরশিল্প ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে স্থায়ী পণ্যমেলা প্রাঙ্গণ চালু করা হবে। আম ও অন্যান্য ফলমূলসহ উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন নাগরিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, যেখানে কাউন্সিলরগণের স্থায়ী কার্যালয় থাকবে এবং অডিটোরিয়াম ও কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থা থাকবে।আগামীতে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের নামে রাস্তা-ঘাট, মোড় ও স্থাপনার নামকরণ করা হবে। সোনাদিঘী সিটি সেন্টারের পাশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। রাজশাহী রেলস্টেশন, বিমানবন্দর ও সড়কের মোড়ে মোড়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য স্মারক স্থাপন করা হবে।
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠান মঞ্চে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রামানিক, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নওশের আলী,অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, ডাঃ তবিবুর রহমান শেখ, নাঈমুর হুদা রানা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোস্তাক হোসেন,আহসানুল হক পিন্টু, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. মোঃ মোসাব্বিরুল ইসলাম,কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মীর তৌফিক আলী ভাদু,তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জিয়া হাসান আজাদ হিমেল, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোঃ ফিরোজ কবির সেন্টু, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মাহাবুব-উল-আলম বুলবুল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, প্রচার সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোহেল, মতিহার থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আসলাম সরকার।
মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু, জাসদ রাজশাহী মহানগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল কবির, জাসদের সভাপতি নুরুল ইসলাম হিটলার, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, রাজশাহী চেম্বার সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলর সদস্য অ্যাড. একরামুল হক, রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন প্রমুখ।
ইশতেহার ঘোষণা শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
Leave a Reply