স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সারাদেশে দ্বিতীয় দফার টানা ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি চলছে। ৫ ও ৬ নভেম্বর দুদিনের অবরোধ শেষে একদিন বিরতি দিয়ে আবারো ৮ ও ৯ নভেম্বর অবরোধের ডাক দিতে পারে দলটি।
সেইসাথে শুক্রবার ও শনিবার বিরতি দিয়ে আগামী ১২ নভেম্বর থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে দলটির একাধিক সূত্র।
টানা অবরোধের আভাস দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে বলেছেন, সরকারেরে পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা আর উত্তেজনা বেড়েছে। সব মিলিয়ে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এতে করে সংঘর্ষ ও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া টানা অবরোধের প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সহিংসতা ঘটালে পুলিশ কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানিয়েছেন একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
২৮ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত আটদিনে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সহিংসতায় ৮৯টি মামলা হয়েছে। এতে বিএনপির ২ হাজার ১৭২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে এ তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের অতিরিক্ত উপকমিশনার কে এন রায় নিয়তি।
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সহিংসতার ঘটনায় ৮৯টি মামলা হয়েছে। এতে ২ হাজার ১৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীতে ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজধানীর পল্টন থানায় সবচেয়ে বেশি ১৪টি মামলা হয়েছে। এরপরেই রয়েছে রমনা মডেল থানা। থানাটিতে ৬টি মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া, টানা দুদিনের অবরোধে জনগণের জান-মাল রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী র্যাবের ৩০০ টহল টিম কাজ করছে। সেইসাথে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রবিবার অবরোধের প্রথম দিন সকাল থেকে তাদের মোতায়েন করা হয়।
বিজিবির জনসংযোগ সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও স্ট্যান্ডবাই রয়েছে আরও ১০ প্লাটুন।
অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে ১২ জায়গায় আগুন লাগানো হয়েছে। তার মধ্যে ৯টি বাস, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রবিবার (৫ নভেম্বর) সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেল থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অবরোধের আগের রাতে ১২টি স্থান থেকে আগুনের সংবাদ পাওয়া গেছে। ঢাকা শহরে সাতটি, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর দুটি, সিরাজগঞ্জে একটি, বরিশালের চরফ্যাশনে একটি, রংপুরের পীরগঞ্জে একটি ঘটনা ঘটে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাদলপুরে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে আগুন এবং একটি জায়গায় গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ারে আগুন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া রাজধানীর খিলগাঁও থানার বনশ্রী এলাকায় অছিম পরিবহন নামে একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মো. সবুজ (৩০) নামে এক গাড়িচালক দগ্ধ হয়েছেন।
এদিকে, রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় পুলিশের টহল গাড়িকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মাহবুব আলীসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিন দুপুরে রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি কাজী মো. হাসানকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
নাম প্রকাশ না করে বিএনপির এক নেতা জানান, আমাদের কর্মসূচি ছিলো পূর্ব কর্মসূচিগুলোর মত শান্তিপূর্ণ । ফলে সমাবেশে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন। সংঘর্ষের পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা ও কঠোর অবস্থান, গণগ্রেপ্তার এবং হামলার কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের থেকে তারা বিছিন্ন হয়ে পড়ে। বিপযর্স্ত হয়ে পড়ে তারা। তাদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার এড়াতে তাদেরকে নিজের ঠিকানা ছেড়ে নতুন ঠিকানা খুঁজতে বেগ পেতে হয়েছে।
তবে বিএনপির এই নেতা মনে করেন, প্রাথমিক অবস্থা সামাল দিতে পেরেছেন নেতাকর্মীরা। ব্যাপক গ্রেপ্তার ও হামলার মধ্যেও তারা গত চারদিনের অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে রাজপথে উপস্থিত থেকে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। এখন সামনের দিনগুলোতে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে নৈরাজ্যে ঠেকাতে রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।
Leave a Reply